জয়তু ফতোয়া
শ্রীপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়
ভারতীয় মুসলিম মেয়েদের অবস্থা ও বঞ্চনা নিয়ে
ক্ষোভ মুসলিম মহিলা সংগঠনগুলোর মধ্যে আজকের নয়। ভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের পক্ষে
তালাকপ্রাপ্ত মহিলাদের জন্য সহানুভূতি প্রকাশ ছাড়া আর কিছু করা এমনকি বলার অধিকারও
নেই আমাদের গণতন্ত্রে। বস্তুত বাইরে থেকে চাপিয়ে দেওয়া আইন কোনও সম্প্রদায় ভালো
মনে গ্রহণ করতে পারে না। সংস্কারের তাগিদটা আসতে হয় সম্প্রদায়ের ভেতর থেকেই। এর
প্রমাণ আমরা পেয়েছি হিন্দুদের সতীদাহ রদ বা বিধবা বিবাহ আইনসম্মত করার ইতিবৃত্তে।
সতীদাহের বর্বরতা বন্ধ করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন হুমায়ুন থেকে আওরঙ্গজেব
পর্যন্ত বিভিন্ন মুঘল বাদশারা যে যার মতো করে [ en.wikipedia.org/wiki/sati_(practice)]। তবু সম্রাটের
একনায়কতন্ত্রেও তা সম্ভব হয়নি। লুকিয়ে বা প্রকাশ্যে পূণ্যলাভের অনুষ্ঠান চলেছে
রমরমিয়ে। পর্তুগীজ কলোনি গোয়া, ফরাসী ও ডাচ উপনিবেশ চিনসুরা ও পণ্ডিচেরীতে অবশ্য
এই কুপ্রথা রদ হয়ে যায় যথাক্রমে ১৫১৫ সালে এবং অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকেই।
কিন্তু বৃহত্তর বৃটিশ ভারতে মিশনারীদের আন্দোলন, সরকারী বিরূপতা সত্ত্বেও এই প্রথা
জাঁকিয়ে বসেছিল যতদিন না হিন্দুদের মধ্যে কিছুটা আলোকপ্রাপ্ত একদল মানুষ রাজা রামমোহনের
নেতৃত্বে সংগঠিত হলেন এর অবসান ঘটাতে। কাজটা সহজ ছিল না; লন্ডনের প্রিভি কাউন্সিল
পর্যন্ত দৌড়েছিলেন সনাতন হিন্দুধর্মের স্বনিয়োজিত রক্ষকরা। তাই ১৮২৯ সালে স্যার
উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক সতীদাহ নিষিদ্ধ ঘোষষণা করলেও তা কার্যকরী হয় ১৮৩৩-এর পর প্রিভি
কাউন্সিলের রায়ে। তারপরেও চোরাগোপ্তা সতী বানানো চলতে থাকে। কিন্তু আইনের লাগাতার
বিরোধিতা তাকে প্রথা রূপে প্রতিষ্ঠিত থাকতে দেয়নি, অপ্রচলিত করে দিয়েছে। স্ত্রীশিক্ষার প্রসার, বাল্যবিবাহ নিষিদ্ধ করা,
বিধবাবিবাহ আইনসম্মত করা, হিন্দু পুরুষদের বহুবিবাহের বিরুদ্ধে জনমত গঠন এসমস্তই
সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে বিদ্যাসাগরের মতো একরোখা নিঃস্বার্থ হিন্দু ব্যক্তি ও
তাঁর অকিঞ্চিতকর সংখ্যক হিন্দু সমর্থকদের উদ্যোগেই। যে ব্রিটিশরা নির্বিচারে
সাম্রাজ্যবাদী অত্যাচার ও অপমান চালিয়ে পার পেয়ে গেছে দিনের পর দিন, ধর্মবিশ্বাসে
আঘাত করে সংস্কার সাধনের স্বৈরাচার করতে সাহস পায়নি তারাও। তাদেরও অপেক্ষা করতে
হয়েছে ধর্মসম্প্রদায়টির ভেতর থেকে আভ্যন্তরীণ তাগিদের জন্য।
সুতরাং ১১ই ডিসেম্বর Forum of
Empowerment of Women (FEW) in India দ্বারা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারভাঙা সভাগৃহে আয়োজিত আলোচনা সভাটির মুখ্য বিষয় “Rights of Indian Muslim Women: today’s perspective” আপাতভাবে আলোর দিশা দেখায়। সংগঠনটি মুসলমান মহিলাদের জন্য যেসব আইনের দাবিতে সরব হয়েছিল সেগুলো হল :-
১) তালাক দেবার সম অধিকার(নারী ও পুরুষের) থাকবে এবং তালাক
হবে আদালতের মাধ্যমে।
২) একাধিক স্ত্রী(বহুবিবাহ) নিষিদ্ধ করতে হবে।
৩) উত্তরাধিকার সম্পত্তির ওপর পুত্র-কন্যাকে সমান অধিকার
দিতে হবে।
৪) দত্তক আইন চালু করতে হবে।
৫) নির্যাতিত, তালাকপ্রাপ্ত, স্বামীপরিত্যক্ত ও বিধবা
মহিলাদের জন্য স্বনির্ভর প্রকল্প চালু করতে হবে।
এই দাবিগুলি
নিয়ে ফোরাম ৯ডিসেম্বর ২০১০-এ একটি পদযাত্রা ও সমাবেশ করে পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন
মুখ্যমন্ত্রীকে এবং ২৮ ডিসেম্বর ২০১০-তে মাননীয় রাজ্যপালকে স্মারকলিপি পেশ করে।
রাজ্য তথা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে যথেষ্ট সন্তোষজনক উত্তর না আসায় “ফিউ ইন্ডিয়া” বৃহত্তর আন্দোলনের প্রস্তুতি
নিচ্ছে।
ফোরামের পত্রিকায়
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসলামি আইনের পরিবর্তনের একটি খতিয়ানও পেশ করা হয়। -
মরোক্কো – ১৯৮৬ সালে বহুবিবাহ নিষিদ্ধ
হয়।
টিউনিশিয়া-১৮৫৭ সালে Law of Personal Status অনুযায়ী বহুবিবাহ নিষিদ্ধ
হয়। আদালতের বাইরে যে কোনও তালাক অসিদ্ধ ঘোষণা করা হয়(৩০ নং ধারা)।
ইরাক- ১৯৫৯
সালে ল ওব পারসোনাল স্টেটাসে বলা হয়, কাজী যদি মনে করেন স্ত্রীদের প্রতি বৈষম্য
করা হবে না, আর্থিক সঙ্গতি থাকবে ইত্যাদি তাহলেই দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি দেওয়া যেতে
পারে।
ইয়েমেন-রাষ্ট্রপতি নিজে আইন
করে আদেশ দিয়েছেন তালাক না দিতে।
ইন্দোনেশিয়া-
১৯৭৫ সালে যে আইন হয় তাতে নাগরিকদের সমমর্যাদা, সমঅধিকার, সমস্ত বিয়ের
রেজিস্ত্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়। বহু বিবাহ নিষিদ্ধ হয়।
তুরস্ক- দ্বিতীয় বিয়ে করতে
গেলে আদালত কর্তৃক পূর্বের বিবাহের অবসান চাই অথবা পূর্বের স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে
তার প্রমাণ।
মিশর, জর্ডন-মহিলাদের
স্বামীকে তালাক দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
আলজেরিয়া-১৯৫৯ সালে তালাকের
ক্ষেত্রে স্বামী ও স্ত্রীর সমান অধিকার দেওয়া হয়। যথেষ্ট কারণ দর্শাতে পরলে তবেই
তালাক।
বাংলাদেশ- পারিবারিক আইন
বদলেছে। আদালতে যথেষ্ট কারণ প্রমাণ ছাড়া তালাক নয়।
পাকিস্তান- আদালতে যথেষ্ট কারণ
ছাড়া তালাক নয়।
এ দেখে মনে হয়,
মুসলমান নারীর সমস্যা দেখা হয়েছে মূলত তালাকের নিরীখে।
যাইহোক পূর্বে
উক্ত বিষয় নিয়ে আন্দোলনের সাফল্য কামনা করে এবং তা ফলপ্রসূ ও অধিকতর কার্যকরী হবে
এই আশা প্রকাশ করে আমি ইতিপূর্বে একটি প্রবন্ধ রচনা করি। ভাষা ও উপস্থাপনায়
বিন্দুমাত্র বিদ্রূপ বা শ্লেষের ইঙ্গিত না দিয়েও এবং মুসলমান শাসকরা কীভাবে
দেশবাসীর নৃশংশ কুসংস্কার অবসানে সৎ উদ্যোগ নিয়েছিলেন – ইতিহাসের পাতা থেকে শুধু সেটুকুর
উল্লেখ করেও দেখলাম বহু প্রত্রিকা প্রবন্ধটি ছাপতে সাহস করছে না বা প্রকাশ করতে
চাইছে না –ভারতীয়
রাজনীতির চিরাচরিত তোষণ সংস্কৃতির উত্তরাধিকার বশত। আমার বর্তমান রচনা এর পরবর্তী
পর্যায়ের। ফিউ ইন্ডিয়ার সেমিনারের উল্লেখ করতে গিয়ে আমি তথাকথিত শিক্ষিত মুসলমান
পুরুষবর্গের- কেউ সাংবাদিক, সাহিত্যিক, কেউ পত্রিকা সম্পাদক, প্রকাশক ইত্যাদি,
এদের কাছ থেকে বিচিত্র অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। একজন তো মানতেই চাইলেন না এমন কোনও
দাবি দাওয়া থাকতে পারে বলে বা থাকলেও তাতে কর্ণপাত করা উচিৎ বলে। আর জন তো হজরত মহম্মদের কাছে স্বামীসংসর্গ বঞ্চিতা নারীর
কাহিনী ইনিয়ে বিনিয়ে অনাবশ্যক দীর্ঘ করে শুনিয়ে কী সাব্যস্ত করতে চাইলেন সেটাই
পরিস্কার হল না। যাঁরা একটু বুদ্ধিমান, তাঁরা মন্তব্য করলেন সতীদাহকে বর্বর প্রথা
বললে নাকি সংশ্লিষ্ট ধর্মের মানুষ আঘাত পাবে; তাই এমন প্রবন্ধ প্রকাশ করা চলবে
না।!! [বিশ্বহিন্দু পরিষদও বোধকরি এতে অসন্তোষ দেখাতে পারবে না]। এবং কেউই
প্রকারান্তরে এই কথা মানতে চাইলেন না যে, একই দেশের নাগরিকদের জন্য ফৌজদারি আইন
যখন অনুরূপ, তখন দেওয়ানি আইনটাও বৈষম্যহীন হওয়া উচিৎ। এমন কি মানলেন না পুরুষের
বহুবিবাহ বা একতরফা তালাকের অধিকারে কোনও
সমস্যা থাকতে পারে। সর্বোপরি এই প্রশ্নের উত্তর কারও কাছে নেই যে, হিন্দুদের জন্য
আইন প্রণয়ন কালে যেখানে শংকরাচার্য বা মনুর বিধান অনুসরণ করা হয়নি, হয়েছে যথাসম্ভব
যুগোপযোগী দৃষ্টিকোণ, অন্যান্য ধর্মসম্প্রদায়ের ক্ষেত্রেও তাই; সেখানে একটি
নির্দিষ্ট ধর্মসম্প্রদায়ের জন্য কেন শরিয়তি খবরদারি বলবৎ থাকবে?
বুঝলাম আফ্রোজা খাতুনরা(ফিউ ইন্ডিয়ার
সম্পাদিকা) সভাগৃহ অলংকৃত করার জন্য কয়েকজন মুসলিম পুরুষকে সাজিয়ে রাখতে সমর্থ
হলেও তাঁদের পথটা অপরিমেয় দীর্ঘ, বন্ধুর। কারণ এদেশের গণতন্ত্র ওরফে ভোটতন্ত্র
তথাকথিত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মৌলবাদী পুরুষদের তোষামোদিই জাতীয় নীতি বানিয়ে
রেখেছে। মুসলিম মেয়েরা সম্ভবত সেই সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নয়, দাসত্বের দায় লাভ
করেছে। হিন্দু মেয়েদের আংশিক মুক্তি এসেছিল কিছু যুগপুরুষের হাত ধরে; তাই আদতে
তারা এখনও পুরুষতন্ত্রের ধারক ও বাহক রয়ে গেছে। আমার দূরাশা ছিল, আফ্রোজাদের বেলায়
বুঝি তা হবে না- তারা নিজেরাই দাবি আদায় করে নেবে।
সম্প্রতি “দেওবন্দ” ফতোয়া এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে
প্রতিক্রিয়া আমাদের দিবাস্বপ্ন গুলিয়ে দিল! দেওবন্দ সেমিনারি ইতিপূর্বে ২০০৮ সালে
সন্ত্রাসবাদকে ইসলাম বিরোধী বলে প্রশংসা কুড়িয়েছিল। সেই দেওবন্দ ঘরানাই আবার সলমন
রুশদিকে জয়পুরে আয়োজিত আন্তর্জাতিক পুস্তকমেলায় আসতে দেয়নি। ভারত সরকার মেনেও
নিয়েছিলেন একপ্রকার। আজ দেওবন্দের দারুল উলম্-এর মনে হয়েছে, ভারতীয় সংস্কৃতিতে
প্রথম স্ত্রী বর্তমানে দ্বিতীয় দার পরিগ্রহ বেমানান। ফতোয়া বিভাগের চেয়ারম্যান
মুফ্তি আরশাদ ফারুকি বলেন যথোপযুক্ত কারণ ছাড়া দ্বিতীয় বিবাহ গ্রহণযোগ্য নয়।
ইসলামে পরুষকে চারটি বিবাহের অনুমতি দিলেও উৎসাহ মোটেও দেওয়া হয়নি। ব্যাস্! হয়ে
গেল সমাধান! ভারতের কোটি কোটি মুসলিম নারীর চোখের ফেলা ঘুচে যাবে। অর্থাৎ হাজার
হাজার আলোকপ্রাপ্ত মেয়েদের যুক্তিসঙ্গত দাবি দাওয়া নয়, হলে হবে সেই “ফতোয়া”র জয়, যার জেরে জেরবার এই উপমহাদেশ
ও তার প্রতিবেশীরা। তাছাড়া ফতোয়ায় কেবল বহুবিবাহকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে; যখন তখন তালাক দেওয়া,
উত্তরাধিকারে পুত্র কন্যার মধ্যে বৈষম্য, বোরখা পরার বাধ্যবাধকতা, দত্তক-জটিলতা
এসব নিয়ে কোনও মতামত নেই। পুরুষরা আমাদের দয়া করে যা দেবে সেটুকুকেই শিরোধার্য করে
রাখতে হবে। তার যথোপযুক্ততা নির্ধারণ করবে
কে? সেই নির্ধারণ যে কায়েমি স্বার্থের রক্ষক হবে না, এর ভরসা কোথায়? মুসলিম মহিলা
সংগঠনগুলি যদি এই ফতোয়াকে নিজেদের লড়াইয়ের একটি হাতিয়ার ঠাওরায়, তাহলে মারাত্মক
ভুল হবে। তাদের অভিন্ন দেওয়ানি আইনসহ অন্যান্য সমানাধিকারের দাবি থেকে সরে আসা
মানে উপবাসী পেটে লজেঞ্চুস্ খেয়ে খুশি থাকা।
আশ্চর্যের ব্যাপার, না আশ্চর্য আর হই না, শুধু উল্লেখের ঘটনা,
কাশ্মীরের Radical Kashmiri Women’s
separetist group “dukh-e milat”[DeM] দেওবন্দের
তীব্র বিরোধিতা করে বলেছে,মুসলমানদের (পুরুষদের বলা বাহুল্য)
কেবল দুটো নয়,কোরান মতে চারটে বিয়ে করা উচিৎ।“Islam permits a man to have four wives. There is no
compromise on the tenets of Islam. The Fatwa issued by Deoband Mufti is against
the spirit of Islam. Therefore, I will say a man should have four wives at a
time.” শোষিতকে ভালোই মগজধোলাই করা গেছে মর্ষকামে সুখ
খোঁজার। ডিইএম চেয়ার পার্সন আশিয়া আনদ্রাবি(Asiya Andrabi) একসময় বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপের জন্য স্বামী সন্তানসহ গ্রেপ্তার হয়েছিল এবং
তার উগ্রপন্থী স্বামীর ওপর জনৈক মানবাধিকার কর্মীকে হত্যার অভিযোগ ছিল। আশিয়ার
যুক্তি, কাশ্মীরে এনমিতেই অস্থিরতা ও সংঘাতের জন্য বিধবা ও অনাথের (মা থাকলেও)
সংখ্যা খুব বেশি। তাই বিধবা উদ্ধারের দায়িত্ব নেওয়ার জন্যও পুরুষদের একাধিক বিয়ে
করা উচিৎ। অবশ্য ফতোয়ায় উল্লেখ আছে, ‘ভারতীয় সংস্কৃতির’ সাথে বহুবিবাহ বেমানান।
যারা নিজেদের ভারতীয় মনে করে না, তাদের ভিন্ন চিন্তার অবকাশ আছে বৈ কি!
মজার কথা হল, প্রাচীন কাল থেকে ভারতীয়
সংস্কৃতি কিন্তু পুরুষদের বিশেষত ব্রাহ্মণ ও রাজারাজড়াদের একাধিক বিবাহের তামাশা
ভালোই দেখেছে। আমরা ছোটবেলায় রূপকথায় পড়ি “এক রাজার সাত রানী।..” সুতরাং ভারতীয়
সংস্কৃতি বলতে যা বোঝানো হয়েছে তাতে নবজাগরণের পর পাশ্চাত্য প্রভাবে রুচিশীল
ভারতীয় মূল্যবোধ-নীতিবোধকেই ধরতে হবে। না হলে গোলমাল বাধবে। এই নীতিবোধের
ভিত্তিতেই হিন্দু, শিখ, খ্রিস্টান সহ বিভিন্ন্ ধর্মের জন্য বিবাহ পদ্ধতি ছাড়া
একইরকম দেওয়ানি আইন, পুত্র-কন্যার সমান উত্তরাধিকারের স্বীকৃতি।
প্রসঙ্গে ফিরি; “All India
Muslim Personal Law Board”-এর সদস্য ডঃ নঈম হামিদ এই ফতোয়াকে স্বাগত
জানিয়েছেন। আশার কথা। আবার উদ্বেগেরও – কারণ ফতোয়া ব্যাপারটাই
সভ্য সমাজের ও গণতন্ত্রের পরিপন্থী। একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের পক্ষে ফতোয়ার ভয়ে
কুঁকড়ে যাওয়া কিংবা ফতোবার রায়ে ধন্য বোধ করা দুটোই লজ্জার। যে মানুষগুলো ধর্মীয়
নিয়মকানুনের শিকার তারাই শেষ কথা বলার অধিকারী।
আর একটা ব্যাপার না বলে পারছি না, শধু
বহুবিবাহ বন্ধ করাই যথেষ্ট নয়। হিন্দুসমাজে বিগত শতাব্দীতেই বহুবিবাহ নিষিদ্ধ হয়ে
গেছে। মেয়েদের সমস্যার সুরাহা হয়েছে তাতে কতটুকু? বিনা শ্রমে অর্থাগমের উৎস বহুর
বদলে একটিতে এসে ঠেকায় একমাত্র পত্নী ও একমাত্র শ্বশুরগৃহের ওপর বরপক্ষের দাবি ও
নিগ্রহ বেড়েই চলেছে। সতীদাহ নিষিদ্ধ হলেও পণপ্রথার পার্শ্বচর হিসাবে গৃহবধূদাহ
যথেষ্ট জনপ্রিয় আজও। হিন্দু পুরুষতন্ত্রের ‘পণপ্রথা’ নামক ঘৃণ্য
ব্যাধি এখন নারীকে ‘দেনমোহর’-এর নিরাপত্তা দেওয়া মুসলিম সমাজেও সংক্রমিত। দুই গোষ্ঠীর
মধ্যে জীবনসঙ্গিনীকে জীবন্ত দগ্ধ করার প্রতিযোগিতার ধারা বিবরণী যেন আজকের সংবাদ
মাধ্যম। তাই লড়াইটা সম্প্রদায় নির্বিশষে সকল নারীর। ‘ওদেরটা ওরা বুঝুক,
আমাদেরটা আমরা দেখব’ কিংবা ‘আমাদের ব্যাপারে ওরা বলার কে?’ এই জাতীয়
বিচ্ছিন্ন বিরোধিতার অবস্থানে না থেকে সংহতি প্রয়োজন শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সকল
সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে। এটা লেখা যতটা সহজ হল, কার্যক্ষেত্র যে অন্য রূপ
দেখাবে জানা কথা। কারণ “ সত্যই সেলুকাস....” । তবে যুগ যুগ ধরে যেখানে
হতাশায় গুমরিয়েছি, একটু আশা রেখে দেখিই না।
তথ্যসূচী:
১. en.wikipedia.org/wiki/sati_(practice) ২. ফিউ ইন্ডিয়া পত্রিকা, প্রস্তুতি সংখ্যা ডিসেম্বর ’১১
৩. The Telegraph, 13 April ৪. indiatoday.intoday.in/www-madhyamam.com
About
ESSAYS AND FEATURES