আগাছা
শ্রীপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়
ব্যালেন্সবীমে জিমনাস্টিক করছে বছর সাতেকের একটি মেয়ে।
কোচের কড়া নজরদারিতে ফাঁকি মারার উপায় নেই। একটু ভুলচুক হলেই কঠোর শাস্তি। মেয়েটা
সেই ভয়ে অনুশীলনে আসতে চায় না। কিন্তু সম্ভাবনাময়ী। এশিয়াড কেন অলিম্পিকেও তাক লাগানোর ক্ষমতা ধরে, যদি
লেগে থাকে। তার কৈশরের প্রতীক্ষায় কোচিং সেন্টার। সে তাই রাষ্ট্রের ‘সুনজরে’। দর্শকাসনে বসে তার মা হাততালি
দিয়ে উৎসাহ দিচ্ছে। রোজ আসতে পারে না, পেশায় সাংবাদিক। মেয়েকে ভুলিয়ে ভালিয়ে পৌঁছে
দিয়ে যায়, আবার সেখান থেকে স্কুলে বা বাড়ি নিয়ে যায়, যেদিন যেমন রুটিন। কাজের
ফাঁকে এটুকু সময়ের জন্য নিজের দপ্তরের কাছ থেকে সহযোগিতা সে আদায় করে নিতে পেরেছে
ভবিষ্যত অলিম্পিয়াডের খাতিরে। দুধের চল না থাকলেও আইসক্রীমের জনপ্রিয়তা প্রবল।
ল্যু তার মায়ের কাছে প্র্যাকটিসে নিয়মিত আসার বিনিময়ে প্রতি সপ্তাহের শেষে একখানা
আইসক্রীমের সওদা করে রেখেছে।
গাড়ি আইসক্রীম
শপের সামনে পৌঁছতেই দেখল একটা জটলা। খুব বেশি ভীড় নয়। প্রেসের পরিচয়টা বেশ কাজে
লাগে। কাছে গিয়ে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতে অসুবিধা হল না। ল্যাম্পপোস্টের নীচে
খালি ফুটপাথের ওপর একটা ময়লা জামা পরা কয়েকদিনের শিশু। নেতিয়ে পড়ে আছে। তবে জীবন্ত
তখনও। হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারলে বাঁচানো যেতে পারে। এ অবশ্য নতুন কিছু নয়। পথে
ঘাটে, রেলস্টেশনে, অনাথাশ্রমের দরজায় এমন হামেশাই দেখা যায়। কোপনি না খুলেও বলে
দেওয়া যায় বাচ্চাটা মেয়ে।
আনসাং মেয়ের
জন্য স্ট্রবেরি আইসক্রীমের বরাত দিয়ে গাড়ি থেকে একটা তোয়ালে বার করে শিশুটিকে
রাস্তা থেকে তুলে জড়িয়ে নিয়ে জনসাধারণের উদ্দেশে হাঁক দিল, “কেউ যেতে চান হাসপাতালে?
বাচ্চাটাকে হয়ত বাঁচানো যাবে।”
বলে কী? বাচ্চা
কোথায়? ও তো একটা মেয়ে! ভীড় পাতলা হয়ে গেল। জিনান শহরের মানুষের কাছে এ চেনা
দৃশ্য। আশে-পাশের গ্রামে কন্যা জন্মালে গর্ভের অন্ধকার থেকে পৃথিবীর আলোয় এসে ভালো
করে কেঁদে ওঠার আগেই হয় তাকে নিকেশ করা হয়, নয়ত যেখানে সেখানে এমনকি আস্তাকুঁড়ে
ফেলে দেওয়া হয় - অনাথাশ্রম, কুকুর-বেড়াল, মেয়েমানুষের দালাল যে কেউ তুলে নিক বা
ভোগে লাগাক। নইলে মৃত্যু তো আছেই।
বাচ্চাটার পরণের
ন্যাকড়া ভিজে ছিল কতক্ষণ কে জানে? শুধু জল নয়, খানিকটা হলুদ স্থলও নির্গত হয়ে
রয়েছে। আনসাং সেটা ফেলে দিয়ে ব্যাগ থেকে টিশ্যু বার করে ভালো করে মুছল। নিজের মেয়ে
ল্যু-কে তাড়া দিল, “গাড়িতে
ওঠ। একে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।”
হাসপাতাল যে
অজ্ঞাতকুলশীলদের চিকিৎসা করে না তা নয়; তবে তাকে বৈধ অভিভাবক বা অনাথাশ্রমের অধীনে
থাকতে হয়। আনসাং কে? তার মা? তাহলে ল্যু কে? তার মেয়ে? ল্যু যদি মেয়ে হয় তাহলে
নেতিয়ে পড়া বাচ্চাটা কী করে আনসাং-এর মেয়ে হতে পারে? কঠিন আইন। একটির বেশি
সন্তানের জন্মদান রাষ্ট্র অনুমোদন করে না। এমনকি এক সন্তান থাকতে আর একটি দত্তক
নেওয়াও নয়। তাছাড়া ভদ্রমহিলা তো মেয়ের নামটাও ঠিক মতো বলতে পারছেন না। বলছেন নাম
এখনও রাখা হয়নি। চিংচিং বলে ডাকেন। সুতরাং আনসাং-এর কোনও অধিকার নেই মমতার বশবর্তী
হয়ে মুমূর্ষু শিশুটিকে বাঁচানোর চেষ্টা করার। আনসাং অবশ্য জানে শধু শানডং প্রদেশ
অর্থাৎ জিনান যার রাজধানী সেখানেই নয় - হেনান, আনহুই, হুনান, শাংজি, জিয়াংশি,
উত্তর জিয়াংশু এসমস্ত প্রদেশেও ‘শিশু’ মানে
শিশুপুত্র। এনিয়ে লেখালিখিও করেছে, তবে সাবধানে। এমন কিছু খুঁজে পাওয়া চলবে না যা
রাষ্ট্রকে বিব্রত করে।
সাংবাদিক বলে সে যতটা সমীহের, তার চেয়েও বেশি সন্দেহের। অনাথ আশ্রম বা পুলিসের
কাছে শিশু সমর্পণ করবে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারা কোনও রকমে ছাড়া পেল। তার মধ্যেই
সাংবাদিকের ঘাঘু চোখ ও কান আর একটি গল্পের গুঞ্জনে আটকে গেল। তাই ছাড়া পেয়েও
অসুস্থ বাচ্চা কোলে জেনে নিল, ঐদিন হাসপাতালে একটা জটিল অস্ত্রোপচার হচ্ছে। এক জন
চল্লিশ বছর বয়সি মহিলা যে সারা জীবন অসহ্য মাথার যন্ত্রণা আর সারা শরীরে কাঁটা
ফোটার মতো বিচিত্র কষ্টে ভুগেছে, তার অপারেশন হবে। জিনান শহর থেকে দূরে এতদিন যা
টোটকা চিকিৎসা বা মাঝেমাঝে অ্যালোপ্যাথি হয়েছে তাতে কষ্ট কমেনি। কাজে ফাঁকি মারার
ছল ভেবে পতিদেব মধ্যেমধ্যে লাঠিসোঁটা ব্যবহার করেও সুফল পায়নি। হঠাৎ একদিন বৌকে
পেটানোর সময় তার পিঠ ফুঁড়ে বেরিয়ে এল একটা ছুঁচ। মহিলার গগনভেদী চিৎকারে
প্রতিবেশীর দল উঁকি দিয়েছিল। এরকম স্ত্রীশিক্ষা খুব সাদামাটা ব্যাপার বলে লোকে
সাধারণত কর্ণপাত করে না। সেদিনের চিৎকারটা বোধকরি একটু মাত্রাছাড়া হয়ে গিয়েছিল। আর
তামাশা দেখতে কার না ভালো লাগে? কিন্তু বৌটির রক্তাত্ত শরীর দেখে বোধহয় কারও কারও
মনে হয়েছিল যথেষ্ট শিক্ষা হয়েছে, আর না দিলেও চলে। কাছে এসে তাদেরও চক্ষূ স্থির।
রক্তমাখা শরীরের তিন জায়গা থেকে উঁকি মারছে ছুঁচের মাথা! শিক্ষাদান অসমাপ্ত রেখে
তাকে দৌড়ে নিয়ে আসা হল জিনান শহরের এই হাসপাতালে।
ডাক্তাররা
এক্সরে করে দেখেছেন মাথা আর দেহ কাণ্ডের ভেতর গাঁথা রয়েছে তোষক সেলাই করার মতো
মোটা থেকে মাঝারি মিলিয়ে মোট ছাব্বিশটা ছুঁচ। আশঙ্কা আরও ছুঁচ থেকে থাকতে পারে।
ডার্টবোর্ড শিউরে উঠবে! এই অবস্থায় মহিলাটি কীভাবে বছর চল্লিশ বেঁচে আছে এমনকি মা
হয়েছে, সেটাই চিকিৎসা বিজ্ঞানের কাছে একটা বিস্ময়! তার জরায়ুতেও একাধিক ছুঁচ।
স্বামী বলেছে, এই জন্যই বোধহয় তাদের ছেলে জন্মেছিল শরীরে আঁকচিরের দাগ নিয়ে। আপাতত
খান ছয়েক ছুঁচ বার করা গেছে দেহ থেকে। কিন্তু মাথার যন্ত্রণায় ছটফটিয়ে প্রায়ই
জ্ঞান হারানো মানুষটির মাথা থেকে ছুঁচ বার করা এক বিরাট মেডিকেল চ্যালেন্জ। এই
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কেসটি অন্যত্র পাঠাতে চেয়েছিল। কিন্তু প্রধান শল্য চিকিৎসক এই
চ্যালেঞ্জটা বা কৃতিত্বটা হাতছাড়া করতে চাননি। আটজন ডাক্তরের দল অপারেশন থিয়েটারের
জন্য তৈরী হচ্ছেন। সেই নিয়ে কর্তৃপক্ষ ও কর্মীরা শশব্যস্ত। তাই আনসাংকে বেশিক্ষণ
আটকে জেরা করার ধৈর্য্য কারও বিশেষ নেই। আনসাংরা সামান্য প্রতিশ্রুতি ভুজুংভাজাং
দিয়েই ছাড়া পেয়ে গেল। আর পেশাদার সাংবাদিক পেয়ে গেল আর একটা প্রতিবেদন করার মতো
উত্তেজক গল্প যদিও এমন ঘটনা কম হলেও খুব বিরল নয়! অতীতেও সদ্যজাত কন্যার নরম মাথায়
বা দেহে ছুঁচ ফোটানোর মতো ঘটনা এই হাসপাতালই প্রত্যক্ষ করেছে। সাধারণত এসব মায়েদের
চোখের আড়ালে ঠাকুমা দাদু, বিশেষ করে
দাদুদের কীর্তি হয়ে থাকে, যারা নাত্নি নয় নাতি চায়। বেশির ভাগই মারা যায়।
দু-একটা নির্লজ্জ মেয়ে মানুষ এর পরেও বেঁচে থেকে তাদের বাবা, দাদু, ঠাকুমাকে
ভবিষ্যতে অস্বস্তিতে ফেলে। অবশ্য এর জন্য কারও শাস্তি হয়েছে বলে শোনা যায়নি। হয়ে
থাকতেও পারে। না হলেই বা কী? তবে এবারের কেসটা গিনিস্ বুকে তোলার মতো; যদিও এমন
খবর দেশের বাইরে ফাঁস হয়ে গেলে সরকার ছেড়ে দেবে না। আনসাং-এর উপস্থিতি কারও পছন্দ
হচ্ছিল না। তাকে তাড়াতে পারলে বাঁচে। নাহলে রাস্তার মেয়েবাচ্চা নিয়ে আদিখ্যেতার
মজা টের পাইয়ে দিত।
আনসাং-এর গাড়িটা
কিন্তু থানা বা এতিমখানার বদলে পৌঁছল তার বাড়িতে। অফিসে জানিয়ে দিল ফোন করে নতুন
স্টোরি পাওয়া গেছে; রোমহর্ষক! অফিসে হাজিরা না দেওয়ার জবাবদিহি আগামীকাল কীভাবে
করবে কাল ভাববে। কোলে আধমরা শিশু নিয়ে আর ‘রোমহর্ষক’
গল্প শুনে তার আর মাথা কাজ করছিল না। ল্যু কিছু বুঝেছে কিনা কে জানে? গাড়িতে অনবরত
বকবক করছিল। এখনে আসা অব্দি প্রশ্নবর্ষণ বন্ধ রেখে কেমন বোবা মেরে গেছে।
বাচ্চাটাকে নিজের বোতল থেকে সামান্য জল খাইয়েছে আনসাং। একটা কিছু খাদ্যও দরকার।
এমন বাচ্চাকে কী খাওয়াতে হবে সে পরামর্শ হাসপাতাল দেয়নি। নিজের বিবেচনা মত
ব্যবস্থা করতে হবে আগে। বন্ধু ডাক্তারকে ফোন করল আনসাং। সে রাতের আগে আসতে পারবে
না।
কত বছর হয়ে গেল,
আজকাল এদেশে কারও ভাই-বোন হয় না। এক সন্তানের বিধি চালু হওয়ার পর এক প্রজন্মের
বেশি কেটে গেছে। তাই তুত ভাইবোনেরও কম দেখা মেলে। বহুক্ষণ পর ল্যু মুখ খুলল, “এ কে মা?”
“মেইমেই”। মুখ ফসকে বেরিয়ে এল কথাটা। বোন!
রাত এল। গোপনে
চলতে লাগল চিকিৎসা ও পরিচর্যা। প্রকাশ্যে চেষ্টা শুরু হল চিংচিং-এর মা, নিদেন
পক্ষে পালিকা মা হবার প্রয়াস। হাসপাতালে বলে ফেলা নামটাই বহাল রইল। কিন্তু ল্যু
আদর করে বোনের নাম রাখল মেরি। চিংচিংকে হাতে পেলেই আনসাং তন্নতন্ন করে খোঁজে কোথাও
কিছু ফুটে আছে কিনা। ডাক্তারকে বারবার পরীক্ষা করতে বলে, এক্সরে করাতে চায়, শরীরে
কিছু ঢুকে নেই তো!
প্রতিবেশীরা
পাগলামি দেখে হেসে বাঁচে না। একটি মেয়ে হলেই যেখানে চীনের বিপুল সংখ্যক বাবা-মা,
দাদু-ঠাকুমার দল তাকে আস্তাকুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলতে সময় নষ্ট করে না, সেখানে নিজের মেয়ে
থাকতে স্বামী পরিত্যক্তা পাগলি আর একটি মেয়ের আমদানি করেছে। তাকে নিজের করে পাবার
জন্য খরচ করছে! বড় করতে খরচ করবে! বিয়ে দিতে গিয়ে বোধহয় নিজেকে বিকিয়েই দেবে!
শানু চ্যাং
যেদিন জিনানে এসে এক বড়লোকের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ যোগাড় করল, সেদিন তার কোটরে
ঢোকা চোখের দুপাশে কালি, মুখে ছ্যাঁকার ঘা, হাতে-পায়ে প্রহারের চিহ্ন, আঙুলে
নখকুনি, জামার অন্তরালে না জানি আরও কত আঘাত লুকোনো। সেই সাথে পাঁজরের হাড়গুলো
ঢোলা জামার ভেতর থেকেও জানান দিতে চায়, সে শ্বশুরবাড়ি করেছে বারো বছর। শেষেরটিও
স্ত্রীলিঙ্গ নিয়ে জন্মানোয় ‘মা’ হতে না পারা শানু আর স্বামীর
মুখোমুখি হতে পারেনি। যে ছুরি দিয়ে দাই কন্যার নাড়ি কাটবে সেই ছুরি শানুর গলার নলি
ফাঁক করে দেবে- আগাম হুঁশিয়ারি ছিল। দাই্ ও বাকি সাহায্যকারীরা যখন বাচ্চাটাকে
আগেরগুলোর মতো গরমজলের জারে ডুবিয়ে মারা হবে, না অন্যভাবে, এই আলোচনার জন্য বাড়ির
লোকের মত নিতে বেরিয়েছিল, সেই ফাঁকে কাঁচা দেহে রক্তের স্রোত সামলাতে সামলাতে
আঁতুড়ঘরের কাঁথাকানি যা পেরেছে পোঁটলা করে বেঁধে নিজের প্রাণ নিয়ে চুপিচুপি
রাস্তায় বেরিয়ে আসে শানু। বাচ্চাটা ‘ওঁয়া-ওঁয়া’ করে তারস্বরে চেঁচাচ্ছিল। তাকে
পরিস্কার করা হয়নি, দরকারও হবে না। শানুর ভিজে বুকের আড়ালে মন বলল, এই মেয়েটা
সম্ভবত খেতে না পেয়েই শেষ হবে। হোকগে। নিজের হাতে আগেরগুলোর গতি করেছিল। এবার যখন
শানু কোনও মতেই রেহাই পাবে না, তখন সময় নষ্ট নয়। অন্যরাই যা করার করুক। ভাগ্যিস
রাতে প্রসব হয়েছে। ভোরের আলো ফোটার আগে যত দূর সম্ভব অতিক্রম করতে হবে অপরাধী
ক্রীতদাসীকে। অবশ্য বাপের বাড়ি থেকে দেওয়া যৌতুক আর বারো বছর উদয়াস্ত খাটুনির অর্থমূল্য
ধরলে তারই এখন দাস-দাসী রেখে আরাম করার মতো সঙ্গতি থাকার কথা।
মেয়ে হলে এক
ছটাক জমি বরাদ্দ করে না সরকারের জমিবণ্টন বিভাগ। আবার একটার বেশি বাচ্চা থাকা চলবে
না বলে কন্যাকে বাঁচিয়ে রেখে পুত্রের আশা করাও বেআইনি। তাই ভূমি বণ্টনের নিয়মে
শিশুহত্যা একপ্রকার আইনি স্বীকৃতিই পেয়ে এসেছে; বিশেষ করে কৃষিভিত্তিক গ্রামীন
সমাজে। ঠিক আইনি স্বীকৃতি বললে হয়ত কথা উঠবে, বরং প্রশ্রয় বলা ভালো।
বড়লোকের দাসী
হয়ে তিনবেলা খাওয়া-দাওয়া মন্দ জুটছিল না, অন্তত শ্বশরবাড়ির তুলনায়। তার ওপর আবার
যৎসামান্য মাইনেও। ঘরের কাজের সঙ্গে দোকান বাজারও করত শানু। পরিচয় হয় এক রেস্তোরাঁ
মালিকের সাথে।
“কোথায় থাকিস রে?”
“ঐ তো, যাদের জুতোর ফ্যাক্টরি আছে,
তাদের বাড়ি।”
“ওমন ফ্যাক্ট্রি তো অনেকের থাকে। এত
বড় শহর, জায়গার নাম বল। কোথা থেকে এসেছিস?”
“ লাংচু থেকে”
“কেন এসেছিস? বর মারত? ছেলে হচ্ছিল
না?”
“তোমার এত খবরের কী করকার? এখানে
কাজ করে নিজের দেখভাল নিজে করব বলে এসেছি, ব্যাস্।”
“মালিক কত দেয়? গিন্নী মাগী তো মহা
কেপ্পন শুনেছি।”
“ এই তো জায়গার নাম শুধোচ্ছিলে।
তুমি জানো নাকি কার বাড়ি আছি? হুঁঃ! চারবেলা খেতে পাচ্ছি। মাইনে পাচ্ছি। বাজারে
এসে তোদের মতো লোকেদের সাথে গল্প করছি। আর কী চাই?”
“আহা! মাইনে কত দেয় বলনা।”
“খাই পরি তো, তাই মাইনেতে ঐ হাতখরচ
চললেই হল। আমার তো খরচ বিশেষ নেই। জামাকাপড়ও ওরাই দেয় পুরোন হলেও।”
“আমার রেস্তোরাঁয় কাজ করবি? বাসন
মাজা আর রেস্তোরাঁ পরিস্কার করার কাজ। খাওয়া থাকা ফোকটে, মাইনেও দেব যা পাস তার
চেয়ে বেশি।”
“কত পাই আমি বলিনি তো।”
“না বললে কি আর আমরা জানি না? তোদের
মতো ঘর পালানো কাজের মেয়েকে পেটভাতায় খাটানো হয়। আমার কাছে কাজ করলে আরো ভালোভাবে
থাকবি। আমার বাসন মাজা আর সাফ-সুতরোর লোক লাগবে।”
ভালো থাকাটা কী
বস্তু? সে তো ভালোই আছে আগের চেয়ে। আর একটু ভালো থাকা কতটা জরুরি? পরের দিন সে
রেস্তোরাঁ মালিককে জানাল, পাকা আশ্রয় তার পক্ষে ছাড়া সম্ভব নয়। তবে বাজার করতে এসে
একটু সময় বাঁচিয়ে সে রেস্তোরাঁর বাসন মেজে দিতে পারে। মালিক জু মেই রাজি। শানুর
সামান্য উপরির ব্যবস্থা হল। তাই দিয়ে সে নিজের জন্য লুকিয়ে ক্রীম কেনে ফাটা ত্বক
পরিচর্যার জন্য; পিজা, পেস্ট্রি খায়। একদিন বাবা-মায়ের হাত ধরে একটি বাচ্চা মেয়েকে
মনিহারি দোকানে ঢুকতে দেখল। মেয়ের জন্য বাচ্চাদের ক্রীম, পাউডার কিনল ওরা। অনেক
দাম। শানু মনে মনে বলল, “আদিখ্যেতা”; কিন্তু মনটা কেমন উদাস হয়ে গেল
তার।
মালকিনের এক
মেয়ে। বাড়ি ফিরে দেখল, তাকেও মাখানো হয় ঐ দামী কোম্পানির বেবিক্রীম। নিজের জন্য
কেনা ক্রীমটা আর মাখতে ইচ্ছা করে না। গন্ধটা বেশ, তবু।
হিদি ম্যাডাম আর
তার আধবুড়ো বরটা মেয়েকে নিয়ে বড্ড ন্যাকামো করে। তার জন্য খেলনার পাহাড়। যেখানে
যেতে চায় সেখানকার জন্য গাড়ি তৈরী। যা খেতে চায়, সঙ্গে সঙ্গে তা মুখের কাছে হাজির।
শানুর সহ্য হয় না। কেন হয় না ঠিক বোঝে না।
শধু মনে হয় এসব থেকে দূরে চলে যায়।
নিশ্চিন্ত
পারিবারিক পরিবেশের নিরাপত্তা থেকে বেরিয়ে রেস্তোরাঁয় পাকাপাকি ভাবে বহাল হতে
ভরসা হয় না। দোনোমোনো করে একদিন শেষ পর্যন্ত জু মেইয়ের কাছে নিজেই চাকরির দরখাস্ত করল।
লিখিত নয়, মৌখিক। জু মেই রাজি। সুতরাং শানুর এবার নতুন ঠিকানা
ওয়াং শি রেস্তোরাঁ। উদয়াস্ত হাড়ভাঙা খাটুনি আর গালমন্দটা, খাওয়া থাকা মাইনের বিনিময়ে
মোটামুটি পুষিয়ে যাচ্ছিল। মাঝে মাঝে মনে হয়, আগের বাড়িটাই ভালো ছিল। কেন যে ওখানে থাকলে
তার মন খারাপ লাগত বুঝতে পারত না। তবে, এখানে এসে শানু চ্যাং সেয়ানা হয়েছে।এই জায়গায়
পর্যটকের আনাগোনাও আছে। ডাওয়েনকন গ্রামের মাটি খুঁড়ে পাওয়া গেছে চীন
সভ্যতার প্রাচীনতম লিপির প্রত্ন নিদর্শন। কত পর্যটকের আসা যাওয়া এই প্রদেশে।
কনফ্যুসিয়াসের শহর কিউফু দেখার পথেও লোকে এখানে এসে ঘুরে যায়। বেশ কয়েকটা রেস্তোরাঁ।
শানু জানে যে গতর খাটাতে ভয় পায় না,তার কাজের অভাব হবে না। সে
তো বাচ্চা নয় যে লোকে তাকে ঠকিয়ে নেবে। বাচ্চা শ্রমিকদের যে যেমন খুশি ব্যবহার করে।
নিজেকে বেশ স্বাধীন মনে হয়।
ওয়াং শি-তে দুই কন্যাসহ
খেতে এসে জায়গাটা পছন্দ হয়ে যায় আনসাং-এর। সামনের মে মাসে তার বড় মেয়ে ল্যু-র চোদ্দ
বছর পূর্ণ হবে।প্রতিবার নিজের ছোট্ট ফ্ল্যাটেই ল্যুর বন্ধুদের ডেকে ঘরোয়া ভাবে জন্মদিন
পালন করে। এবার মেয়ে এশিয়াডে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছে। পরিচিতরা বড় পার্টি আবদার করছে। পাঁচতারা বা তিনতারার বিল মেটানোর মতো ট্যাঁক নেই তার। ছোট কন্যাটিকে দত্তক পেতে অনেক ঝক্কি গেছে। মেয়েটার যাবতীয় খরচ বহন
করা ছাড়াও তাকে লালন-পালন করার অপরাধে প্রায়ই অতিরিক্ত বেরিয়ে
যায়। অথচ বিদেশীরাও দত্তক পায়। বন্ধু এরিন রিপার আর ডেভ কেমন সুন্দর
বাচ্চা মেয়ে কোলে নিয়ে উড়ে গেছে স্পেনে। যাইহোক ওয়াং শির মতো সুন্দর ভদ্র রেস্তোরাঁয়
বন্ধুবান্ধবকে ডাকলে সেটাতে সম্মান ও বাজেট দুটোই বজায় থাকবে মনে হয়।
ল্যু
এদিন পরেছে সুন্দর গোলাপি গাউন। একেবারে ইয়োরোপিয়ান রাণীদের মতো। গলায় মুক্তোর চোকার।
কানে মুক্তোর দুল। ডান হাতে মুক্তোর ব্রেসলেট। বাঁ হাতে জড়ানো গাউন থেকে বেরিয়ে আসা
ফিনফিনে গোলাপি ওড়নার প্রান্ত। প্রায় প্রতি বছরই গোলাপি-সাদা ফ্রক পরে জন্মদিনে সাজে
ল্যু আর তার মতো অনেক সচ্ছল পরিবারের শহুরে মেয়েরা। এবছর গাউন
পরে নিজেকে ভীষণ বড়-বড় আর গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে। ছোট বোন সাত বছরের চিংচিং ওরফে মেরিকে
মা পরিয়েছে ল্যু-রই ছোট হয়ে যাওয়া একখানা দারুণ সুন্দর গোলাপি ফ্রক। তার সঠিক জন্ম
তারিখ মায়ের জানা নেই। যেদিন তাকে কুড়িয়ে পেয়েছিল, সেদিনটাই তার জন্মদিন হিসাবে পালন
করে একইভাবে। মেরি জিমন্যাস্টিক নয়,তাইকোন্ডু শেখে। দিদির মতো সাজার শখ তার। তাই দিদির
জন্মদিনে নিজেও বার্থডে গার্ল সেজে দর্পিত পদক্ষেপে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অতিথিদের
অভ্যর্থনা জানাচ্ছে।
মাঝে মাঝে ওয়েটারদের
কেউ কামাই করলে শানু চ্যাংকে শেখানো আছে অর্ডার নেওয়া, খাবার
পরিবেশন করা, টেবিল সাফ করার কাজ। শানুর প্রবল ঠাণ্ডায় বাসন মাজার
চেয়ে এই ঠেকা দেওয়ার কাজ বেশি পছন্দ।এখন অবশ্য শীত নেই। ইচ্ছা আছে, মালিককে বলে কয়ে
পাকাপাকি ভাবে এই কাজেই পদোন্নতি ঘটিয়ে নেয়।মাঝেমাঝে বেশ টিপস্ও পাওয়া
যায়। ওর কাজের হাত তো খুব ভালো; পড়াশুনোটাই যা দুর্বল। তবে অর্ডার
নেওয়ার সময় যেমন তেমন করে লিখে কিচেনে গিয়ে বুঝিয়ে দিতে পারলেও কাজ চলে। ধীরে ধীরে
আরো শিখছে। গ্রামে ‘নিজের’ বাড়ি যাওয়ার কথা ভাবলেই শিউরে ওঠে শানু। আবার অরুচিকর
স্বামীসহবাসের খেসারত দিয়ে ন মাস কষ্টকর গর্ভধরণের পর প্রবল যন্ত্রণা সহ্য করে আস্তাকুঁড়ের
সামগ্রী পয়দা করা। একটাও ছেলে হল না। চল্লিশ পেরিয়ে গেল। তার কপালে আর
মা হওয়া নেই। তা এই বেশ ভালো আছে। দাসীবৃত্তির মধ্যেও স্বাধীনতা। উপার্জনের স্বনির্ভরতা।
হলঘরটা আজ বুক করেছে এক মহিলা যার নাকি দুটি সন্তান, দুটিই
মেয়ে! মস্ত হলঘরে সাততলা কেকটা চকোলেট ক্রীমে চর্চিত হয়ে গায়ে চোদ্দটা মোমবাতি-বিদ্ধ
হয়ে মাঝখানের টেবিলে রাখা। সামনে কেক কাটা ছুরির বাঁট রিবন দিয়ে সাজানো।
এমন অদ্ভূদ
দৃশ্য শানু দেখেনি জীবনে। গ্রামে ছোট ছেলেদের জন্মদিনেও এত ঘটা করে না লোকে। এই
রেস্তোরাঁয় কাজ নেবার পর এই প্রথম একটা জন্মদিনের ভোজসভা হচ্ছে। তার কেমন একটা
অস্বস্তি হচ্ছে, অনেকটা আগের জুতো-কারখানার মালিকের বাড়িটায় কাজ করার সময় যেমন হোত
তেমনটা, কিন্তু আরও তীব্র যেন। নিজেকেই শুনিয়ে বলল বোধহয়, “ন্যাকামো”। যদিও এই ন্যাকামো থেকে তার
সামান্য বাড়তি রোজকার হচ্ছে বিশ্রাম বরবাদ করে।
নিমন্ত্রিতরা
আসতে শুরু করেছে। কিছু পুরুষমানুষ, বেশির ভাগ মায়েদের হাত ধরে বাচ্চা ও
কিশোর-কিশোরীর দল। ছেলেদের পোষাক বলতে প্যান্ট-শার্ট, কেপ্রি-টিশার্ট, জিন্স এইসব,
যা চীনের মেয়েরাও পরে থাকে। চোখ ধাঁধিয়ে যায় মেয়েদের রকমারি পার্টি-ড্রেস দেখে।
রংবেরং-এর নানা ছাঁটের পোষাক। জামার রং-এর সাথে মিলিয়ে মাথায় সিল্কের ফুল, যেন
সদ্য বাগান ধেকে ছেঁড়া। হাতে কনুই পর্যন্ত দস্তানা কারো কারো। কেউ কেউ পরেছে
মিনি স্কার্ট ও হাঁটু অব্দি উঁচু গোড়ালির জুতো। কারও বা ইভনিং গাউনের পাশের চেরা অংশের
ফাঁক দিয়ে উঁকি মারছে নিদাগ ফর্সা পায়ে পেনসিল হিল। শানু অবাক
হয়ে দেখছে।
সবাই মিলে “হ্যাপি বার্থডে” গাইল,
যদিও ইংরিজির চল তেমন নেই। জন্মদিনে ল্যুকে অনেকে অনেক শুভকামনা করল। আসন্ন এশিয়াডে ভালো ফল প্রার্থনা করল। ল্যুর
সঙ্গে ছোট্ট মেরিও বায়না ধরল কেক কাটার। কিছুক্ষণের মধ্যে মোমবাতি নিভিয়ে কেক কেটে
বিতরণ শুরু হল। বাচ্চার মায়েরা সাবধানে একটুকরো মুখে ফেলল, পুরুষরা গপ্ করে গিলে ফেলল।
ছোটরা পেস্ট্রির ক্রীম নিয়ে এ ওর গালে মাখিয়ে হুল্লোড় করে চেটেপুটে খেল। “মা,মা” বলে দুই মেয়ে ঐ পার্টি
দিয়ে ফুটানি দেখানো মহিলাকে জড়িয়ে ধরল। মায়ের গালেও কেকের ক্রীম। সবাই হেসে উঠল। মুখে
অমৃতের স্বাদ গ্রহণের পরিতৃপ্তি। তারপর ঢেলে ভুরিভোজ। বুফে হলেও ওয়েটারদের ছুটতে হচ্ছিল।
রকমসকম দেখে মনে হল, ল্যু জন্মে সবাইকে ধন্য করে দিয়েছে। ঐ ন্যাকা
মেয়েমানুষ আবার রেস্তোরাঁ কর্মীদেরও পেস্ট্রি এগিয়ে দিচ্ছিল।
কাজ ফেলে শানু অস্থির
হয়ে কাউকে কিছু না বলে কোথায় পালাল যেন, নজর এড়ায়নি মালিক ও কর্মীদের। টয়লেটে কি? পার্টি
শেষ হতে চলল। কিন্তু সে ফিরে আসেনি। আচ্ছা ফাঁকিবাজ মেয়েমানুষ তো। সব ভালোয় ভালোয় চুকুক,
জু মেই মজা দেখাবে শানু চ্যাংকে। নির্ঘাৎ বেসমেন্টে নিজের ঘরে গিয়ে ঘুম লাগাচ্ছে। ভেবেছে
এত হৈ-চৈএর মধ্যে ওর কাট মারাটা কেউ দেখতে
পাবে না। মাঝরাতে ঘুম ভাঙিয়ে যদি ওকে শায়েস্তা না করেছে জু!
অনুমানটা ঠিকই ছিল।
শানু তার নিজের ঘরেই ছিল। তবে বহু ডেকেও তার ঘুম ভাঙানো গেল না। দরজাটা
ভাঙতে হল। দরজার তলা দিয়ে লালচে তরল গড়িয়ে আসছিল? রক্তাত্ত মেঝে
পেরিয়ে কেউ ঢুকতে সাহস করল না। ছুরিখানা মেঝেতে রক্ত মেখে পড়ে
আছে। ঝুলন্ত হাতটা থেকে তখনও রক্ত ঝরছে ক্ষীণ ধারায়।
মেয়েদের আত্মহত্যা
এদেশে খুব সাধারণ ব্যাপার। এ নিয়ে বিশেষ কেউ মাথা ঘামায় না। কিন্তু অতিথিরা সবাই বিদায়
নেয়নি। বিশেষ করে যেখানে সাংবাদিক হোস্ট উপস্থিত। সুতরাং অ্যাম্বুলেন্স ও পুলিস দু
জায়গাতেই খবর দেওয়া হল। হলই বা স্ট্রেচার,এমন সাদা চাদরে মোড়া বিছানায় এত ষত্ন করে
শানুকে কেউ কোনও দিন শোয়ায়নি। অজ্ঞান মানুষটা সেসব টের পেল না।
জ্ঞান ফিরতেই চোখের
সামনে ক্যামেরা, মাইক্রোফোন, ফ্ল্যাশলাইট।
“কেন করতে গেলেন আত্মহত্যা? জানেন না এটা অপরাধ।”
শানু নিরুত্তর। চোখেও ভাষা নেই।
“জবাব দাও।” পুলিসের ধমক।
উত্তর নেই। আবার ধমকানি, “চুপ করে কেন? কী হয়েছিল ঠিকঠাক বল।”
শানুর চোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল। ক্ষীণ
স্বরে ফিসফিস করল,“মেয়ের
জন্ম দিলেও ‘মা’ ডাক শোনা যায় ...? তা হবে, আমিও তো মাকে মা বলতাম।”
অনেক
জিজ্ঞাসাবাদে যা উদ্ধার হল তা অতি পরিচিত কাহিনী। কোনও নতুনত্ব
নেই।
“তখন অত অত্যাচার বরদাস্ত করেও বাঁচার জন্য লড়ে যাচ্ছিলে -এখন তো নিজে রোজগার করে স্বাধীন ভাবে থাকো।
এখন এমন কাজ করতে গেলে কেন?” প্রশ্নটা পুলিসের নয়, ল্যু ও মেরির মায়ের।
এবার চিৎকার করে
উঠল শানু চ্যাং। “নিজের চার চারটি মেয়েকে
আমি গরমজলে চুবিয়ে নয়ত খেতে না দিয়ে মেরেছি। ওরা কোনওদিন পেস্ট্রি
খায়নি, জন্মদিনে নতুন ফ্রক পরে সাজেনি, নুডল্স্, পর্ক, চিকেন
কোনও কিছুর স্বাদ পায়নি। আমি কেক খেয়েছি,কী ভালো খেতে- ওরা খায়নি! আমার বুকের দুধ ঝরে
নষ্ট হয়েছে, দুধ জমে বুক ব্যাথায় টন্টন্ করত; তবু একটাকেও দুধটুকু খাওয়াতে পারিনি। শেষেরটা খিদেয় কাঁদছিল। আমি পালিয়ে এসেছি তাকে ফেলে! তাকে নিয়ে এসে যদি
রাস্তায় শুইয়েও দিতাম, ম্যাডামএর মতো কেউ কি কোলে তুলত না? সবকটাকে আমি নিজের
হাতে মেরে ফেলেছি! তখন আমায় কেন পুলিস ধরেনি? এখন আমায় বাঁচিয়ে তামাশা হচ্ছে? আমায় ফাঁসি দাও। আমি আর ভালো-মন্দ কিচ্ছু খেতে
চাইনা। শ্বাস নিতে চাইনা। আমায় মরতে দাও। ঐ আকাশে গিয়ে আমি তাদের খুঁজব।ওদের নিশ্চই
খুব খিদে পেয়েছে—!”